Skip to main content

খবরের কবরের খবর

একবার নাট-বল্টুকে বলতে শুনেছিলাম, “জানার শেষ নাই, তাই না জানলেও ক্ষতি নাই।”

কথাটা অনেকাংশই বাস্তব। পৃথিবীর ইতিহাসে কতটুকুই বা আর আমরা জানি? ‘কতটুকু’ জানার চেয়ে কতটুকু জানা ‘জরুরি’ তা মোক্ষম। সংস্কৃত ভাষায় গাধাকে গর্দভ বলে, এটা জানা খুব একটা জরুরি না আমার। কিন্তু পরিবেশ আর পরিস্থিতি জোরপূর্বক আমাকে এসব জানতে বাধ্য করছে। ফোন হাতে নিলেই একশ রকমের ‘আপনার পছন্দসই সাজেশন’ দেখায়। ‘আপনার পছন্দ হতে পারে’ এমন বিজ্ঞাপন দেখায়। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কবে বলেছে সে ‘পছন্দমতো’ বিজ্ঞাপন দেখতে চায়? কিন্তু দেখা লাগবে, লাগবে মানে লাগবেই! তাই সবই এখন বিজ্ঞাপন।


সব কীভাবে বিজ্ঞাপন হয়? তা না হলে কী? আমার সামনে যা দেখছি, তা দেখানো হচ্ছে। কয়টা সিদ্ধান্ত আমি নিজে নেই আর কয়টা সিদ্ধান্ত আমাকে প্রভাবিত করে নেওয়ায় এ দুইটার অনুপাত করলেই হয়। একটা সিদ্ধান্তই আমি নেই- আমি সিদ্ধান্ত নিব না। এই হলো আধুনিক মানুষ। যা কিছু নতুন, চকচকে, আকর্ষণীয়- তাই আমাদের পছন্দ। সহজ-সরল এই সিদ্ধান্ত নিতে বেশিক্ষণ ভাবা লাগে না। চিন্তা বর্তায় নির্মাতার উপর, আমরা তো খালি ভোগ করে যাব- আমাদের কি।


এরকম এক বিশ্বে, এমন এক সময়ে, আমি কীভাবে আশা করতে পারি ‘খবর’ একটা জ্ঞানের মাধ্যম? সপ্তাহে সাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা খবর চলমান থাকে। পৃথিবী গোল গোল ঘুরে বিধায় একখানে দিন তো আরেকখানে রাত থাকে। তাই খবর সারাক্ষণই চালু রাখা যায়- কেউ না কেউ কোথাও না কোথাও তো কিছু করছেই। সমস্যা হলো এই ‘কেউ কেউ’ এর ঘেউ ঘেউ-ই এখন খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনশেষে আমি একজন মানুষ আর অন্য মানুষের ব্যক্তিগত খবর স্বাভাবিকভাবেই আমার কৌতূহলে নাড়া দেয়। এই কৌতূহল প্রস্তরযুগের মানুষদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করলেও, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শুধু টোপ হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তারপরও আমরা ছেলেমেয়েদের ‘Importance of Reading Newspaper’ পড়াই। অর্থাৎ পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ অপরিসীম, কারণ পত্রিকায় তা বলা হচ্ছে। একটু থেমে প্রশ্ন করি তো: খবর বিধায় কোনো কিছু জানতে হবে নাকি কোনো কিছু জানতে হবে বিধায় সেটা খবর?


Facebook এ ঢুকার সাথে সাথে যেই পেজটা আসে তার নাম একসময় News Feed ছিল(এমনিতে একে Feed বলে)। একেক প্লাটফর্মে এর একেক নাম। তবে Homepage বলতে এখন ওই News Feed টাই বোঝায় যেকোনো সামাজিক মাধ্যম বা পত্রিকার ওয়েবসাইটে। সবাই এখন খবর বিলাচ্ছে। আর সেই খবর দেখারও সুযোগ করে দিচ্ছে। এখন যদি প্রশ্ন করি: কেন? 

এত ভালো কবে হয়ে গেল মানুষ যে দিন-রাত খেটে খবর সংগ্রহ করে আপনার সামনে বিনামূল্যে সেটা নিয়ে বসে থাকবে?


উত্তরটা আছে বর্তমান ইন্টারনেটের চালিকাশক্তি কীভাবে কাজ করে সেটার উপর। খুব বিখ্যাত একটা বাক্য আছে এই নিয়ে- “পণ্য না কিনে যদি ব্যবহার করেন, তাহলে আসলে পণ্যটা আপনিই।” (“If you don't pay for a product then you are the product.”) তুচ্ছ বিষয়কে শুধু মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। আর Networking Effect এর জন্য আমরা সেগুলোর প্রতি আকৃষ্টও হচ্ছি। Networking Effect, Fear Of Missing Out(FOMO) এসবই আমাদের ব্যক্তিগত মানসিক দিক যেগুলো ব্যবহার করে আমাদেরকে বারবার পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে।


অনেক তো মেকানিজম ভেঙ্গে দেখালাম, কিন্তু দিনশেষে কেউ কেন এসব থেকে বের হয়ে আসতে চাইবে? চিরদিন সারাক্ষণ বিশ্বের সাথে সংযুক্ত থাকার ক্ষতি কই? একটু কল্পনা করি তো মানুষটা কি কাজ করে সেটার ভিত্তিতে সে দেখতে কেমন হবে: একটা আস্ত মাথা, ছোটো ছোটো দুইটা হাত আর দুইটা পা বের হয়ে আছে সেখান থেকে। হ্যাঁ, এটাই তার অবস্থা। সে কাজ করে না, শুধু খায়। মাথার খাবার হলো চিন্তা আর মনের খাবার হলো তৃপ্তি। কিন্তু আজকের দিনে খবর হলো জাঙ্ক ফুড- খালি মাথামোটা করে। আপনার বন্ধু এই করছে, আপনার বান্ধবী সেই করছে, অমুককে কেউ তমুক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এটা করছে, তাই বাংলাদেশের সেটা হচ্ছে, তারপর কি হলো দেখুন ভিডিও-সহ– এসবই আজকের দিনের জানার জিনিস। কেউ নিজেকে জানতে চায় না, খালি খুঁজে অন্যের খবর। আর নিজেকে জানার চেয়ে ‘নিজে’ কে সেটা জানানোটাই বেশি গুরুতর এখন, আমিও যেমন এখানে নীতিকথার বুলি আওড়াচ্ছি।


সবশেষে এটাই সত্য, যা চলছে বা চলে এসেছে, এর বিকল্প কী হতে পারতো তা আমরা কেউ জানি না। আর জানি না বিধায়ই এক দাগে ঠিক-ভুল লিখে দিতে পারছি না কোনোকিছুকেই। যে যেমন তাকে সেভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। কেউ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কেউ অন্যকে নিয়ে। এই দুইয়ের সংমিশ্রণেই আমাদের দৈনন্দিন ঘটনাবলি। কিন্তু প্রশ্ন নিজেকে করতেই হবে- আমি কোনটা জানতে চাই? 



-Mr. Ahmed
15.05.25

Comments

  1. এতো বড় প্যারাগ্রাফ পড়ার টাইম নাই

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

The feeling of a feeling.

It's a common sight that two people meet and live together. Such a common thing, yet we each experience it differently and personally. Two strangers from different backgrounds unite as one. But are we really strangers? The feeling of love, or its absence, is the same in all of us. When we feel it, we know we're feeling something that is not just some made-up words but something inherently woven deep inside every single being. That's love and life. We living beings are tied together with the string of love. Even past our death, love keeps us tied. We live in the memories of our loved ones. Not even death can tear us apart; that's how strong that string is. Some things can be sensed, and we can mostly describe them through our language. But there is something that can only be experienced through memories, memories of something that may have never happened. Still, we feel it had always been happening. We push this feeling away, trying to evade it. But how can we pull the s...

আমার খোঁজ

আমার খোঁজ আমায় খুঁজে পাবে—  তারাদের মাঝে। রজনীগন্ধ্যায়— শরতের সাঁঝে। আমায় খুঁজে পাবে—  খো লা জানালায়। সাগরপারে— দখিনা হাওয়ায়। আমায় খুঁজে পাবে—  ক ল্লোল কলরবে। ধ্বংস্তুপে— নিষ্পেষিত ভৈরবে। আমায় খুঁজে পাবে— স্রষ্টার  হাতে। মৃত্তিকায়— সৃষ্টির সাথে। আমায় খুঁজে পাবে—  সময়ের শেষে। পুণর্মিলনে— স্মৃতির বেশে। আমায় খুঁজে পাবে—  এক বাক্যে। সর্বত্র— পঠিত কাব্যে। কোথায় পাবে না আমায়— খুঁজতে যদি যাও? চোখ মেলে চাও, যদি চোখ মেলতে চাও। - Mr. Ahmed 26.05.25

কুষ্টিয়া, গাঁজা ও মহাজন

কুষ্টিয়া কেন গাঁজার জন্য বিখ্যাত সেটা যতটুকু না বোধগম্য তার চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হলো বিখ্যাত কিছু লোকজন (সাধু-সন্ন্যাসী, কবি) কেন এখান থেকে বের হয়েছিল। কুষ্টিয়ায়  মারাত্মক শীত পরে এর কোনো সন্দেহ নাই। এবার নিজেকে এক শতক আগে কুষ্টিয়ার একজন বাসিন্দা হিসেবে কল্পনা করুন। হার-কাঁপানো এই ঠান্ডায় আপনার নিজের দেহ ও মন গরম রাখার উত্তম এবং অতি প্রাকৃতিক উপায় হলো গঞ্জিকা সেবন, যা এখানে প্রতুল। এখন, গাঁজা হলো এক বিশেষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন অতি উপাদেয় অখাদ্য। এর শারীরিক উপকার-অপকার আমার আলোচ্য নয়; কেননা এ বিষয়ে যারা জানে না, তারা জানার ভান করে আর যে জানে, সে না জানার ভান করে। তাই আসি মানসিক অঞ্চলে। গাঁজার মানসিক যেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে সেটি সৃজনশীলভাবে বিধ্বংসী। মানে এটি আপনাকে নতুন নতুনভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার উপায় বাতলে দিবে। উদাহরণস্বরূপ আমি লালন শাহকেই টেনে আনি( যদিও লোকটি মৃত, তার মুরিদরা এখন জীবিতদের থেকে তাকে বেশি সমীহ করে)। কনকনে শীতে শরীর গরম রাখতে গিয়ে উনি না হয় নিছক দুই এক দফা গাঁজা খেয়ে নিলেন। শরীর গরম হলো, বেশ, পয়সা উসুল। কিন্তু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া উসুল হয় যখন উন...