কুষ্টিয়া কেন গাঁজার জন্য বিখ্যাত সেটা যতটুকু না বোধগম্য তার চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হলো বিখ্যাত কিছু লোকজন (সাধু-সন্ন্যাসী, কবি) কেন এখান থেকে বের হয়েছিল। কুষ্টিয়ায় মারাত্মক শীত পরে এর কোনো সন্দেহ নাই। এবার নিজেকে এক শতক আগে কুষ্টিয়ার একজন বাসিন্দা হিসেবে কল্পনা করুন। হার-কাঁপানো এই ঠান্ডায় আপনার নিজের দেহ ও মন গরম রাখার উত্তম এবং অতি প্রাকৃতিক উপায় হলো গঞ্জিকা সেবন, যা এখানে প্রতুল। এখন, গাঁজা হলো এক বিশেষ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন অতি উপাদেয় অখাদ্য। এর শারীরিক উপকার-অপকার আমার আলোচ্য নয়; কেননা এ বিষয়ে যারা জানে না, তারা জানার ভান করে আর যে জানে, সে না জানার ভান করে। তাই আসি মানসিক অঞ্চলে।
গাঁজার মানসিক যেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে সেটি সৃজনশীলভাবে বিধ্বংসী। মানে এটি আপনাকে নতুন নতুনভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার উপায় বাতলে দিবে। উদাহরণস্বরূপ আমি লালন শাহকেই টেনে আনি( যদিও লোকটি মৃত, তার মুরিদরা এখন জীবিতদের থেকে তাকে বেশি সমীহ করে)। কনকনে শীতে শরীর গরম রাখতে গিয়ে উনি না হয় নিছক দুই এক দফা গাঁজা খেয়ে নিলেন। শরীর গরম হলো, বেশ, পয়সা উসুল। কিন্তু এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া উসুল হয় যখন উনি আধ্যাত্মিক হয়ে দু চারখানা বাক্য রচনা করেন। এই দু চারখানা বাক্যের যের ধরে আরেক দফা গাঁজা সেবন করেন। এভাবেই গাঁজাচক্র পাক খায়।
আরেকটা উদাহরণ দিলে আরো স্পষ্ট হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা জমিদার ভিটা আছে লালন শাহের মাজার থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে একটু দূরেই। গাঁজা যে সাধক বানায়, তা কবি নিজেও সম্ভবত আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। তাই তিনিও গাঁজার প্রানকেন্দ্র, লালন শাহের মাজার ঘেষেই থাকতেন। এখন রবি ঠাকুর মশাই গাঁজা সেবন করতেন কিনা সেটা ইতিহাসবিদ আর সাহিত্যিকদের গবেষণার বস্তু হলেও, আমার চিন্তার বস্তু এই যে, তিনি বাকি মুল্লুক থাকতে ওখানেই কেন গেলেন। ওইযে, গাজার নৌকা পাহাড়তলী যায়, তারপর নৌকাডুবি ঘটায়।
যাই হোক, আমি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি কুষ্টিয়া, গাজা ও কতিপয় মহাজন একসূত্রে গাঁথা। শীত মোকেবেলার জন্যে গাঁজা খায় আর কবি হয়ে বের হয়। তবে গাঁজার গুণগত মান হ্রাস পাওয়ায় ও এর সেবনকে সামাজিকভাবে অসামাজিক প্রতিপন্ন করায় আজ কবি সাহিত্যিকদের মন্দা চলছে। লালন শাহ্ ও আর জন্মায় না আর তার মাজারের ধোঁয়া নাকে টেনে যে রবি ঠাকুর আসবেন, তিনিও আসেন না। এতে করে বাংলা সাহিত্য আর ব্যাকরণ যারা পাঠ করে তাদের বিশেষ সুবিধা হয়েছে। সব খারাপেরই কিছুটা ভালো থাকে বৈকি।
আমার এতক্ষণের সূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণকে যে বা যারা নেহাতই পাগলের প্রলাপ আর সার্কাজম বলে উড়িয়ে দিবেন, আমি বলি, আপনারা আমার মতো গাঁজাখুরি বকছেন।
Comments
Post a Comment