সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন যে-সব দিকে যেতে পারে:
১. সুযোগ সন্ধানী পার্টির নাক গলানো: ক্ষমতাসীন সরকারের বিপরীতে অবস্থান করা কিছু জনগোষ্ঠী চিরকাল ছিল, এখনো আছে, সামনেও থাকবে। তারা নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য সাধারণ ছাত্রদের পিছু পিছু আসতে পারে। অনেকটা স্রোতে গা ভাসানোর মতো। তবে তাদের উদ্দেশ্য সফল হওয়াটা একেবারেই দুরাশা এবং এটা তারা নিজেরাও জানে। সূর্যের আলোর সামনে চাঁদকে দুরবিন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। ছাত্ররা হলো সেই সূর্য। তাই আন্দোলনকারীদের সজাগ থাকতে হবে যাতে বাইরের কোনো শক্তি তাদের সুবিধা নিতে না পারে।
২. ছাত্রলীগের এস্পার নয় ওসপার: জি, অনেক জ্বালিয়েছেন আপনারা। এই সংগঠনটায় কয়জন মনে প্রাণে কাজ করে আর কয়জন শুধু নাম বা পদ বাঁচাতে কাজ করে এটা তাদের কাছেই প্রশ্ন রইলো। পাপ বাপ কেও ছাড়ে না, আর এরা তো তারই ছেলেপুলে। স্মরণকাল ধরে চলে আসা ছাত্রলীগের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নিপীড়নে সব শিক্ষার্থী এবং তাদের শিক্ষকমণ্ডলী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এবারের সাধারণ ছাত্রদের ক্ষেপে ওঠাটা ছিল সেই দেয়ালে পিঠ ঠেকার প্রতিফলন, এটা ছিল সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার tipping point. ছাত্রলীগ হয়ে গিয়েছিল সরকারের first line of attack অর্থাৎ ছাত্রলীগকে দিয়ে আঙুল ডুবিয়ে দেখতো পানি কতটা গরম হয়েছে। কিন্তু এবারে আঙ্গুলখানা সোজা টগবগে তেলে গিয়ে পড়েছে।
৩. অন্তর্ঘাত করে তার অজুহাতে ছাত্রদের উপর বর্বরতা: এটি ক্লাসিক পলিটিক্স। নিজে নিজের ক্ষতি করে অন্যকে দোষারোপ করা। তারপর নিজের দোষ ধামাচাপা দিয়ে তথাকথিত অপরাধীদের শাস্তি দেয়া। ছাত্ররা এখন এই ক্রিটিক্যাল মুহূর্তটায় আছে। সরকার সাধারণের দুর্বল একটা জায়গায় আঘাত করে সেই দোষ চাপিয়ে দিবে আন্দোলনকারীদের উপর। হাত অনেক আগে থেকেই উশখুশ করছিলো ছেলেমেয়েগুলোকে মারার, এখন অফিশিয়ালি একটা অজুহাত নিয়ে মাঠে নামবে আরকি। লেলিয়ে দিবে সামরিক বাহিনীসহ কিছু টাকার বিনিময়ে লাঠিপেটা করতে আগ্রহী যেকোনো শ্রমিক বা সিভিলিয়ানকে। পুলিশের ইউনিফর্মে নেমট্যাগ থাকে, কিছুটা হলেও তারা রাক্ষসী কর্মকাণ্ড করতে ভয় পায়। কিন্তু যাদের কোনো নাম থাকে না, ভয় থাকে না তার কর্মফলের, যাদের কাছে মানুষ কেবল মাংসপিণ্ড- তাদের কী করে মোকাবেলা করতে পারবো আমরা? আমরা তো মারতে শিখি নাই, গড়তে শিখেছি। জুড়তে শিখেছি, ভাঙ্গতে শিখি নাই। আমার প্রার্থনা রইলো এমন নামহীন শরীরধারীদের যারা আজকের পর ছেলেমেয়েগুলোর উপর চরাও হবেন- আপনারা মন থেকে সঠিক কাজটি করবেন। টাকা বা ক্ষমতার লোভে বা চাকরি বা কর্ম বাঁচানোর ভয়ে জানোয়ারে পরিণত হবেন না। আর আন্দোলনকারীদের কিছু বলার নাই। আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাসতে হাসতে জীবন দিয়ে আসবো। বিশ্ব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবে ‘আরে এরা করে কী!?’ আমরা তখন শেষ হাসিটি দিয়ে বলবো, “হা, এভাবেই আমাদের বাপ দাদারা পাকিস্তানের গুলি খেয়ে রাজাকার হয়ে মরেছে!”
Comments
Post a Comment